কাতার থেকে সার্বিয়া যাওয়ার উপায়, বেতন, কাজের নিয়ম ও ভিসা প্রসেস

বর্তমানে ইউরোপের দেশগুলোর মধ্যে সার্বিয়া (Serbia) অনেক জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে দক্ষিণ এশিয়ান দেশের কর্মীদের মধ্যে, বিশেষ করে বাংলাদেশ, ভারত ও পাকিস্তানের নাগরিকদের কাছে। অনেকেই জানতে চান, কাতার থেকে সার্বিয়ায় কীভাবে যাওয়া যায়, কী ধরনের কাজ পাওয়া যায়, বেতন কেমন, এবং কাজের নিয়মাবলী কী কী। এই সম্পূর্ণ বাংলা আর্টিকেলে আমরা এই সব বিষয়ে বিস্তারিত আলোচনা করবো।


✅ কাতার থেকে সার্বিয়া যাওয়ার উপায়

সার্বিয়ায় কাজের উদ্দেশ্যে যেতে হলে আপনাকে একটি বৈধ ওয়ার্ক পারমিট (Work Permit) নিতে হবে। কাতারে অবস্থানরত প্রবাসীরা সাধারণত নিচের দুইটি উপায়ে সার্বিয়ায় যেতে পারেন:

১. ম্যানপাওয়ার এজেন্সির মাধ্যমে

বিশ্বস্ত ও লাইসেন্সপ্রাপ্ত কোনো ম্যানপাওয়ার এজেন্সির মাধ্যমে ওয়ার্ক পারমিট সংগ্রহ করে সার্বিয়ায় যাওয়া সবচেয়ে নিরাপদ উপায়। এই ধরনের এজেন্সি সার্বিয়ার নিয়োগকর্তার সঙ্গে চুক্তির মাধ্যমে কর্মী নিয়োগ করে।

২. সরাসরি কোম্পানির অফার লেটার

কোনো সার্বিয়ান কোম্পানির কাছ থেকে সরাসরি কাজের অফার লেটার পেলে সেই অনুযায়ী ওয়ার্ক পারমিটের জন্য আবেদন করতে পারেন। এ জন্য পাসপোর্ট, ছবি, মেডিকেল, পুলিশ ক্লিয়ারেন্স ইত্যাদি কাগজপত্র লাগবে।


✅ প্রয়োজনীয় কাগজপত্র

  • পাসপোর্ট (কমপক্ষে ২ বছরের মেয়াদ থাকতে হবে)

  • ছবি (পাসপোর্ট সাইজ)

  • মেডিকেল রিপোর্ট

  • পুলিশ ক্লিয়ারেন্স সার্টিফিকেট

  • ওয়ার্ক পারমিট / অফার লেটার

  • কাতার আইডির কপি (যদি কাতার থেকে যাচ্ছেন)


✅ সার্বিয়াতে কাজের ধরণ

সার্বিয়ায় সাধারণত নিচের কাজগুলোর চাহিদা বেশি:

  • নির্মাণ শ্রমিক (Construction Worker)

  • ওয়েল্ডার (Welder)

  • ইলেকট্রিশিয়ান (Electrician)

  • হোটেল ও রেস্টুরেন্ট কর্মী

  • ক্লিনার

  • প্যাকেজিং ও ফ্যাক্টরি ওয়ার্কার

  • ড্রাইভার (লাইসেন্সসহ)


✅ বেতন ও সুবিধা

সার্বিয়াতে প্রবাসী শ্রমিকদের বেতন কাজের ধরন ও কোম্পানির উপর নির্ভর করে। তবে সাধারণত:

পদের নাম মাসিক বেতন (প্রায়)
নির্মাণ শ্রমিক ৫০০–৭০০ ইউরো
ফ্যাক্টরি ওয়ার্কার ৫৫০–৭৫০ ইউরো
ক্লিনার ৪৫০–৬০০ ইউরো
রেস্টুরেন্ট স্টাফ ৬০০–৮৫০ ইউরো
ড্রাইভার ৭০০–৯৫০ ইউরো

🔹 বেশিরভাগ ক্ষেত্রে কোম্পানি থাকা (Accommodation) ও যাতায়াতের সুবিধা (Transport) দিয়ে থাকে।
🔹 কিছু কোম্পানি খাবারও সরবরাহ করে।


✅ কাজের নিয়মাবলী

  • সাধারণত সপ্তাহে ৬ দিন কাজ, দিনে ৮–১০ ঘণ্টা

  • অতিরিক্ত সময়ে ওভারটাইম সুবিধা থাকতে পারে

  • ছুটি: বছরে নির্দিষ্ট ছুটি ও সরকারি ছুটির দিনগুলো

  • কাজের পরিবেশ ইউরোপীয় মান অনুযায়ী

  • শ্রম আইন যথেষ্ট সুষ্ঠু এবং মানবিক


✅ ভাষা ও সংস্কৃতি

সার্বিয়ার অফিসিয়াল ভাষা সার্বিয়ান হলেও অনেক জায়গায় ইংরেজি চলে। তবে স্থানীয় ভাষা শিখলে কাজের সুবিধা হয়।
সার্বিয়ার মানুষ সাধারণত বন্ধুসুলভ ও প্রবাসীদের সহানুভূতির সাথে গ্রহণ করে।


✅ ভিসা প্রক্রিয়া ও খরচ

  • ওয়ার্ক পারমিট: কোম্পানি বা এজেন্সি করে দেয়

  • ভিসা আবেদন: সার্বিয়ান দূতাবাস বা কনস্যুলেটে

  • খরচ: এজেন্সির মাধ্যমে গেলে ২,৫০,০০০ – ৪,০০,০০০ টাকা পর্যন্ত খরচ হতে পারে (আপডেটেড এজেন্সি ফি অনুসারে)


✅ কেন সার্বিয়া?

  • ইউরোপে প্রবেশের সহজ সুযোগ

  • তুলনামূলক সহজ ওয়ার্ক পারমিট প্রক্রিয়া

  • ইউরোপিয়ান অভিজ্ঞতা ও ভবিষ্যতে অন্য দেশে যাওয়ার সম্ভাবনা

  • স্থায়ী বসবাসের (PR) সুযোগ কিছু ক্ষেত্রে পাওয়া যেতে পারে


✈️ সার্বিয়া যাওয়ার ফ্লাইট

কাতার থেকে সার্বিয়ার বেলগ্রেডে সরাসরি ফ্লাইট না থাকলেও ট্রানজিট ফ্লাইট পাওয়া যায়। সাধারণত:

  • Qatar Airways (via Istanbul / Vienna)

  • Turkish Airlines

  • Etihad / Emirates + connecting flights


🔐 সতর্কতা

  • প্রতারক এজেন্সি থেকে সাবধান থাকুন

  • অফার লেটার ও ওয়ার্ক পারমিট যাচাই করুন

  • চুক্তিপত্র ভালোভাবে পড়ে স্বাক্ষর করুন

  • ব্যক্তিগতভাবে না গিয়ে অভিজ্ঞ প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে যাওয়া উত্তম


শেষ কথা

কাতার থেকে সার্বিয়া যাওয়া এখন আর কঠিন নয়, তবে সঠিক তথ্য, নির্ভরযোগ্য উৎস ও আইনি পথে যাওয়া খুবই গুরুত্বপূর্ণ। সার্বিয়া ইউরোপের মধ্যে একটি উদীয়মান সুযোগের দেশ। তাই প্রস্তুতি নিয়ে, সঠিক উপায়ে গেলে আপনি একজন সফল প্রবাসী হতে পারেন।


📝 তথ্যসূত্র:
এই তথ্যগুলো বিভিন্ন অভিজ্ঞ কর্মীর অভিজ্ঞতা, ওয়ার্ক পারমিট নিয়োগ সংস্থা, এবং সাম্প্রতিক ভিসা ট্রেন্ডস অনুযায়ী প্রস্তুত করা হয়েছে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *